ওয়ারিশ সনদ কি,প্রয়োজনীয় তথ্য, প্রক্রিয়া এবং গুরুত্ব | কিভাবে পাবেন ও কোথায় ব্যবহার করবেন

ওয়ারিশ সনদ কি,প্রয়োজনীয় তথ্য, প্রক্রিয়া এবং গুরুত্ব |  কিভাবে পাবেন ও কোথায় ব্যবহার করবেন



ওয়ারিশ সনদ কি,প্রয়োজনীয় তথ্য, প্রক্রিয়া এবং গুরুত্ব |  কিভাবে পাবেন ও কোথায় ব্যবহার করবেন
 ওয়ারিশ সনদ কি,প্রয়োজনীয় তথ্য, প্রক্রিয়া এবং গুরুত্ব |  কিভাবে পাবেন ও কোথায় ব্যবহার করবেন


ভূমিকা:

ওয়ারিশ সনদ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি যা উত্তরাধিকার সনাক্তকরণে ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত সম্পত্তি, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা অন্যান্য আইনি প্রক্রিয়ায় প্রয়োজন হয়।কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার  স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পত্তি তার উত্তরাধিকারদের মধ্যে তার ব্যক্তিগত আইন অনুসারে বণ্টন করা হয় কিন্তু এ জন্য ঐ ব্যক্তির উত্তরাধিকার কারা বা ওয়ারিশ কারা তা জানার প্রয়োজন হয়। আর এই বিষয়টি নির্ধারণ করার জন্য স্থানীয়  পৌরসভা, জেলা পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন অথবা আদালত এই ওয়ারিশ সনদ প্রদান করে থাকে। ওয়ারিশ সনদ প্রাপ্তির সঠিক পদ্ধতি জানা সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই নথি ছাড়া অনেক আইনি কাজ সম্পন্ন করা কঠিন হয়ে পড়ে। এই নিবন্ধে, আমরা ওয়ারিশ সনদ কী, এর ব্যবহার, প্রাপ্তির প্রক্রিয়া এবং প্রাসঙ্গিক তথ্য বিশদভাবে তুলে ধরব।


ওয়ারিশ সনদ কী?

ওয়ারিশ সনদ হলো একটি আইনি নথি যা কোনো মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। এটি সরকারি বা স্থানীয় প্রশাসনিক দপ্তর কর্তৃক ইস্যু করা হয় এবং এতে মৃত ব্যক্তির সমস্ত বৈধ ওয়ারিশদের নাম ও সম্পর্ক উল্লেখ করা থাকে।  মূলত: কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার  স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পত্তি তার উত্তরাধিকারদের মধ্যে তার ব্যক্তিগত আইন অনুসারে এবং দেশিয় আইন বণ্টন করা হয়। এখন দেখা যায় স্থানীয় ভাবে একজন ব্যক্তির উত্তরাধিকার ও ওয়ারিশ কে তা সবাই জানলেও অফিস আদালত বা প্রতিষ্ঠান তো তা জানে না আবার দেখা যায় এক ব্যক্তির একাধিক স্ত্রী ও সন্তান থাকলে, মৌখিক ভাবে কাউকে ত্যাজ্য করলে বা পরিবারের কাছ তেকে দুরে থাকে তার প্রকৃত উত্তরাধিকার কারা তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে,তাই যাতে ভবিষ্যতে কোন সমস্যা না হয় এ জন্য স্থানীয় প্রশাসন অথবা আদালত থেকে কারা সেই মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশ সেই সম্পর্কে এটি সনদ নেওয়ার প্রয়োজন হয় আর এটি-ই হচ্ছে ওয়ারিশ সনদ।

You may also like...

ওয়ারিশ সনদ কেন প্ৰয়োজন ?


কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পরে তার প্রকৃত ওয়ারিশানের সংখ্যা, ধরন (ছেলে না মেয়ে), অবস্থা ইত্যাদি জানতে এই সনদ প্রদান করা হয়ে থাকে। উল্লেখ্য যে আমাদের বর্তমান জাতীয় পরিচয় পত্র বা অন্যান্য সার্টিফিকেট ব্যবস্থা কিছু দিন আগেও ছিল না তাই এই সনদের প্রয়োজন পরে আবার অন্য দিকে বর্তমান ব্যবস্থায় অনেক ভুল ভ্রান্তি থাকে বা আপডেট থাকে না কিম্বা কিছু স্থানে বাস্তব চিত্র হয়তো সার্টিফিকেট বা সরকারি তথ্যের সাথে অমিল থাকতে পারে তাই এই বিষয় গুলো পরিষ্কার করতে ওয়ারিশ সনদ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।

You may also like...

ওয়ারিশ সনদ কোথায় দরকার হয়:

  • জমি-জমা বা সম্পত্তি বাটোয়ারায়
  • নামজারি করতে
  • আইনগত অধিকার আদায়ে
  • ঘোষণমূলক মোকদ্দমায়
  • ব্যাংক- বীমায় মৃত ব্যক্তির অর্থ থাকলে
  • পেনশন তুলতে 

ওয়ারিশ সনদের ব্যবহার:

  • সম্পত্তির মালিকানা হস্তান্তর: জমি, ফ্ল্যাট বা অন্যান্য সম্পত্তি উত্তরাধিকারীদের মধ্যে ভাগ করতে।
  • ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ক্লোজিং বা হস্তান্তর: মৃত ব্যক্তির ব্যাংক ডিপোজিট উত্তোলন বা হস্তান্তরের জন্য।
  • বীমার টাকা উত্তোলন: জীবন বীমার দাবির জন্য।
  • আইনি প্রক্রিয়া: কোনো আদালতে মামলা দায়ের বা সম্পত্তির বিতর্ক নিষ্পত্তির জন্য।

ওয়ারিশ সনদ কোথা থেকে সংগ্রহ করবেন:

সাধারণত ওয়ারিশ সনদ নিচের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সংগ্রহ  করা যায়:

  • ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা
  • সিটি কর্পোরেশন
  • উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তর
  • নিয়মিত আদালত (যদি আইনি বিরোধ থাকে)

ওয়ারিশান সনদ পাওয়ার আবেদন পত্র এর নমুনা বা আবেদন ফরমেট :


বরাবর,

চেয়ারম্যান 

রহমতপুর  ইউনিয়ন পরিষদ

মিঠাপুকুর , রংপুর ।


বিষয়ঃ   ওয়ারিশান সনদ পত্র পাওয়ার জন্য আবেদন।


জনাব,


বিনীত নিবেদন এই যে আমার  পিতাঃ মৃত: কোরবান আলী   , পিতাঃ মৃতঃ হাসান আলী  সাংঃরহমত পুর, উপজেলাঃ মিঠাপুকুর ,  জেলাঃ রংপুর,


উল্লেখিত ব্যক্তি  মৃত্যু কালে নিম্ন লিখিত  ওয়ারিশাগনকে রাখিয়া যায়।


ক্রমিক নং ওয়ারিশানদের নাম সম্পর্ক বয়স মন্তব্য

 ১  ফিরোজা ইয়াসমিন  মেয়ে বয়স-৫৪

২   মোহাম্মদ  শামসুল হক  ছেলে ৫৭

৩ মোছা: আফরোজা বেগম মেয়ে ৫০

৪ আল হাসান  ছেলে ৪৬


অতএব,  মহোদয়ের  সমীপে বিনীত প্রার্থনা এই, উল্লেখিত  বিষয়ে আমাকে একটি ওয়ারিশ  সনদ প্রদান করিতে আপনার সু- আজ্ঞা হয়।


                                                                        বিনীত নিবেদক


                                                                   না মঃ।...................

                                                                   পিতাঃ

                                                                   তারিখঃ                                                

                                                                    গ্রামঃ রহমত পুর



ওয়ারিশ সনদ প্রাপ্তির প্রক্রিয়া:

ওয়ারিশ সনদ পাওয়ার জন্য নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে:


১. আবেদন জমা

প্রথমে স্থানীয় প্রশাসনিক দপ্তরে নির্ধারিত ফরম পূরণ করে আবেদন জমা দিতে হয়। ফরমে নিম্নলিখিত তথ্য থাকতে হবে:

01.মৃত ব্যক্তির নাম ও মৃত্যুর তারিখ

02.সমস্ত উত্তরাধিকারীদের নাম, সম্পর্ক, এবং পরিচয়পত্রের কপি

03.সম্পত্তি বা অন্যান্য দাবির বিবরণ (যদি থাকে)

২. প্রয়োজনীয় নথি

আবেদনের সাথে নিচের কাগজপত্র জমা দিতে হবে:


01.মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর সনদ

02.আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র

03.অন্যান্য ওয়ারিশদের পরিচয়পত্র

04.জমির দলিল বা ব্যাংক স্টেটমেন্টের কপি (যদি প্রাসঙ্গিক হয়)

৩. যাচাই ও সাক্ষাৎকার

সরকারি অফিসার কর্তৃক আবেদন যাচাই করা হয়। প্রয়োজন হলে আবেদনকারীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।


৪. সনদ ইস্যু

যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ওয়ারিশ সনদ ইস্যু করা হয়। সাধারণত ৫-১০ কার্যদিবসের মধ্যে সনদ পাওয়া যায়।


প্রায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)

১. ওয়ারিশ সনদ প্রাপ্তির খরচ কত?

স্থানীয় দপ্তরের নীতির ওপর ভিত্তি করে ফি নির্ধারণ হয়। সাধারণত ২০০-৫০০ টাকার মধ্যে এটি হয়ে থাকে।

২. ওয়ারিশ সনদ কতদিনের মধ্যে ইস্যু হয়?

যদি সমস্ত নথি সঠিকভাবে জমা দেওয়া হয়, তবে এটি ৫-১০ কার্যদিবসের মধ্যে ইস্যু হয়।


৩. কেউ আপত্তি করলে কী করবেন?

আপত্তি থাকলে বিষয়টি স্থানীয় আদালতে নেওয়া হয়। আদালত সমস্ত প্রমাণ পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়।

৪. ওয়ারিশ সনদ কোথায় ব্যবহার করা যাবে?

ব্যক্তিগত সম্পত্তি, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বীমা দাবি, এবং উত্তরাধিকার নিয়ে যে কোনো আইনি কাজে এটি ব্যবহারযোগ্য।


ওয়ারিশ সনদ প্রাপ্তিতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা:

  • সঠিক এবং সম্পূর্ণ তথ্য প্রদান করুন।
  • ভুল তথ্য দিলে সনদ বাতিল হতে পারে।
  • প্রয়োজন হলে একজন আইনজীবীর পরামর্শ নিন।

সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা

ওয়ারিশ সনদ প্রাপ্তি প্রক্রিয়াটি সহজ ও সরল। তবে ভুল তথ্য বা জাল নথি জমা দিলে আইনি জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই, সব সময় সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করুন এবং প্রয়োজনীয় নথি যথাযথভাবে জমা দিন।

Next Post Previous Post
"/>