অবৈধ মোবাইল ফোনের এনইআইআর চালু ১৬ ডিসেম্বর থেকে: সম্পূর্ণ গাইড ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া/obeedh-mobile-phone-nir-system-bangladesh
অবৈধ মোবাইল ফোনের এনইআইআর চালু ১৬ ডিসেম্বর থেকে: সম্পূর্ণ গাইড ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া
![]() |
| অবৈধ মোবাইল ফোনের এনইআইআর চালু ১৬ ডিসেম্বর থেকে: সম্পূর্ণ গাইড ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া |
বাংলাদেশে অননুমোদিত বা অবৈধভাবে আমদানিকৃত মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এসেছে। সরকার ২০২৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে "জাতীয় মোবাইল ডিভাইস নিবন্ধন (এনইআইআর - National Equipment Identity Registry)" সিস্টেম চালু করতে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে সকল অবৈধ মোবাইল ফোন নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে। নিবন্ধনের শেষ সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৪ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত। এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হলে সংশ্লিষ্ট মোবাইল ফোনগুলো নেটওয়ার্ক থেকে বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।
এনইআইআর (NIR) সিস্টেম কী এবং কেন চালু করা হচ্ছে?
এনইআইআর হলো একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেইস সিস্টেম, যেখানে দেশের প্রতিটি মোবাইল ডিভাইসের আইএমইআই (International Mobile Equipment Identity) নম্বর নিবন্ধিত হবে। প্রতিটি মোবাইল ফোনের একটি অনন্য ১৫ ডিজিটের আইএমইআই নম্বর থাকে, যা ডিভাইসটির "ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট" হিসেবে কাজ করে।
এই সিস্টেম চালুর প্রধান উদ্দেশ্যগুলো হলো:
অবৈধ মোবাইল আমদানি রোধ: বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রচুর সংখ্যক মোবাইল ফোন অননুমোদিত পথে আমদানি হয়, যার ফলে সরকার রাজস্ব হারায়।
সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা: নিবন্ধনবিহীন ডিভাইসগুলো সাইবার অপরাধে ব্যবহৃত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
চুরি যাওয়া মোবাইল ট্র্যাকিং: চুরি হওয়া বা হারিয়ে যাওয়া ফোনগুলো ট্র্যাক করা সহজ হবে।
ভুয়া বা নিম্নমানের ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ: নিম্নমানের বা ভুয়া মোবাইল ফোন বাজারে প্রবেশ রোধ করা।
কাদের নিবন্ধন করতে হবে?
যদি আপনার মোবাইল ফোনটি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর অনুমোদন নিয়ে আমদানিকৃত না হয়ে থাকে, তবে আপনার এটি নিবন্ধন করতে হবে। সাধারণত বিটিআরসি অনুমোদিত খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে কেনা ফোনগুলো পূর্বেই নিবন্ধিত থাকে। কিন্তু আপনি যদি বিদেশ থেকে ফোন আনেন, বা অননুমোদিত সূত্র থেকে কিনে থাকেন, তবে এটি "অবৈধ" বা "অননুমোদিত"范畴に入る。
কীভাবে বুঝবেন আপনার ফোনটি নিবন্ধিত কিনা?
আপনি সহজেই এটি পরীক্ষা করতে পারেন:
আপনার মোবাইলের ডায়ালার এ
*#06#ডায়াল করুন।১৫ ডিজিটের আইএমইআই নম্বর দেখাবে।
বিটিআরসির ওয়েবসাইট বা মোবাইল অ্যাপে গিয়ে এই আইএমইআই নম্বর চেক করুন নিবন্ধনের অবস্থা দেখতে।
নিবন্ধন প্রক্রিয়া: ধাপে ধাপে গাইড (১৬ ডিসেম্বর থেকে চালু)
নির্ধারিত সময়সীমা: ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ থেকে মার্চ, ২০২৪ (সুনির্দিষ্ট তারিখ বিটিআরসি প্রকাশ করবে)।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও শর্তাবলী:
মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বর (ডায়াল করুন
*#06#)ব্যবহারকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা পাসপোর্ট (বিদেশি নাগরিকদের জন্য)
মোবাইল ফোন ক্রয়ের রসিদ (যদি থাকে)
ট্যাক্স/শুল্ক পরিশোধের প্রমাণপত্র (যদি ফোনটি ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য বিদেশ থেকে আনা হয়ে থাকে)
নিবন্ধনের উপায়:
প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ অনলাইনে করা যাবে বলে ожиিত হচ্ছে:
বিটিআরসির অফিসিয়াল ওয়েব পোর্টাল বা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন-এ যান।
একটি ইউজার অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন (এনআইডি নম্বর ব্যবহার করে)।
"নতুন ডিভাইস নিবন্ধন" অপশন নির্বাচন করুন।
আপনার মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বর (১৫ ডিজিট) প্রবেশ করুন।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের স্ক্যান কপি আপলোড করুন।
নিবন্ধন ফি অনলাইন পেমেন্টের মাধ্যমে পরিশোধ করুন। (ফি কত হবে তা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি, তবে এটি প্রতিটি ডিভাইসের জন্য ১,০০০ থেকে ৩,০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে বলে ধারণা)।
নিবন্ধন নিশ্চিত হওয়ার পর একটি ইলেকট্রনিক নিবন্ধন সার্টিফিকেট পাবেন, যা সংরক্ষণ করে রাখুন।
নিবন্ধন না করলে কী হবে? জরিমানা ও শাস্তি
সরকারি সূত্র অনুযায়ী, মার্চ ২০২৪-এর পর যেসব মোবাইল ফোন এনইআইআর সিস্টেমে নিবন্ধিত হবে না, সেগুলো ধীরে ধীরে নেটওয়ার্ক সার্ভিস থেকে ব্লক হয়ে যাবে। অর্থাৎ:
মোবাইল নেটওয়ার্কে কল করা বা গ্রহণ করা বন্ধ হয়ে যাবে।
ইন্টারনেট ডাটা পরিষেবা বন্ধ হবে।
এসএমএস পাঠানো বা গ্রহণ করা যাবে না।
এছাড়াও, জরিমানা গঠবোর্ডের হতে পারে, যদিও এর পরিমাণ এখনও চূড়ান্ত নয়। এটি নিবন্ধন ফির চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)
প্রশ্ন: আমার ফোনটি যদি ৩-৪ বছর পুরনো হয়, তবুও নিবন্ধন করতে হবে?
উত্তর: হ্যাঁ, বয়স যাই হোক না কেন, যদি ফোনটি বিটিআরসি অনুমোদিত নালাদেশে বিক্রি না হয়ে থাকে, তবে নিবন্ধন করতে হবে।
প্রশ্ন: একজনের কয়টি ফোন নিবন্ধন করা যাবে?
উত্তর: এখনও সুনির্দিষ্ট সীমা ঘোষণা করা হয়নি, তবে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য যুক্তিসংখ্যক সংখ্যক ফোন নিবন্ধনের অনুমতি দেওয়া হতে পারে।
প্রশ্ন: বিদেশ থেকে আনা গিফটেড ফোনের ক্ষেত্রে কি শুল্ক দিতে হবে?
উত্তর: নিবন্ধনের সময় আপনাকে সংশ্লিষ্ট শুল্ক ও ট্যাক্স পরিশোধের প্রমাণ দেখাতে হতে পারে। না থাকলে, সরকার নির্ধারিত শুল্ক পরিশোধ করে নিবন্ধন করতে হতে পারে।
প্রশ্ন: নিবন্ধন প্রক্রিয়া কি একদম ফ্রি?
উত্তর: না, একটি নির্দিষ্ট নিবন্ধন ফি দিতে হবে, যা এখনও ঘোষিত হয়নি।
ব্যবহারকারীদের জন্য পরামর্শ
দ্রুত আইএমইআই চেক করুন: এখনই আপনার ফোনের আইএমইআই নম্বর চেক করে বিটিআরসির ওয়েবসাইটে (যদি সার্ভিস চালু থাকে) নিবন্ধন অবস্থা যাচাই করুন।
কাগজপত্র প্রস্তুত রাখুন: সম্ভব হলে ফোন ক্রয়ের রসিদ, শুল্ক পরিশোধের রসিদ (যদি থাকে) সংরক্ষণ করুন।
রেজিস্টার্ড দোকান থেকে কিনুন: ভবিষ্যতে মোবাইল ফোন কেনার সময় শুধুমাত্র বিটিআরসি অনুমোদিত রেজিস্টার্ড দোকান থেকে কিনুন, যাতে নিবন্ধনের ঝামেলা এড়ানো যায়।
অফিসিয়াল তথ্য অনুসরণ করুন: বিটিআরসির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (www.btrc.gov.bd) এবং গণমাধ্যমে ঘোষণা অনুসরণ করুন।
উপসংহার
অবৈধ মোবাইল ফোনের এনইআইআর সিস্টেম চালু করা বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতকে অধিকতর নিরাপদ, স্বচ্ছ ও সংগঠিত করার একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। যদিও এটি ব্যবহারকারীদের জন্য একটি অতিরিক্ত প্রক্রিয়া, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটি সাইবার অপরাধ রোধ, সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধি এবং ভোক্তা সুরক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। ১৬ ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়টা ব্যবহার করে দ্রুততম সময়ে আপনার ডিভাইস নিবন্ধন সম্পন্ন করুন এবং জরিমানা ও নেটওয়ার্ক সেবা বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি এড়িয়ে চলুন।
ট্যাগস: অবৈধ মোবাইল ফোন, এনইআইআর, NIR সিস্টেম, মোবাইল নিবন্ধন বাংলাদেশ, আইএমইআই নিবন্ধন, বিটিআরসি, ১৬ ডিসেম্বর মোবাইল নিবন্ধন, মোবাইল ফোন রেজিস্ট্রেশন, বাংলাদেশ মোবাইল নেটওয়ার্ক, সাইবার নিরাপত্তা, mobile phone registration Bangladesh, NIR system, IMEI registration, illegal mobile phone, BTRC new rules
