অবৈধ ও ক্লোন ফোন নিয়ে বিটিআরসির কঠোর বার্তা: এনইআইআর সিস্টেমে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক-obeedh-phone-nir-btrc-guideline-bangladesh
অবৈধ ও ক্লোন ফোন নিয়ে বিটিআরসির কঠোর বার্তা: এনইআইআর সিস্টেমে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক
বাংলাদেশের মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের জন্য আসছে বড় পরিবর্তন। আগামী ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস থেকেই দেশে পুরোপুরি চালু হতে যাচ্ছে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার বা এনইআইআর (NEIR) সিস্টেম। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর মাধ্যমে এই সিস্টেম চালুর মূল লক্ষ্য হলো দেশে অবাধে চলা অবৈধ, ক্লোন করা ও অননুমোদিত মোবাইল ফোনের প্রবাহ বন্ধ করা এবং একটি নিরাপদ ও জবাবদিহিমূলক ডিজিটাল পরিবেশ নিশ্চিত করা।
একটি মর্মান্তিক তথ্য উঠে এসেছে বিটিআরসির সাম্প্রতিক সেমিনারে – মাত্র ৫টি আইএমইআই (IMEI) নম্বর ব্যবহার করে বাজারে প্রায় ৫০ লাখ হ্যান্ডসেট চলছে! এই ভয়াবহ চিত্রই প্রমাণ করে, ক্লোনিং ও অবৈধ ফোনের বাজার কতটা বড় আকার ধারণ করেছে। এই অবস্থার অবসান ঘটাতেই এবার কঠোর হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিটিআরসি।
এনইআইআর (NEIR) সিস্টেম কী এবং কেন এত জরুরি?
এনইআইআর হলো একটি জাতীয় স্তরের কেন্দ্রীয় ডাটাবেইস, যেখানে দেশে ব্যবহার হওয়া প্রতিটি মোবাইল ডিভাইসের অনন্য পরিচয় (আইএমইআই নম্বর) নিবন্ধিত থাকবে। এটি আসলে মোবাইল ফোনের জন্য একটি ‘জন্মনিবন্ধন’ সনদের মতো।
এই সিস্টেম চালুর পেছনে জরুরি কারণগুলো হলো:
ক্লোন ফোন নির্মূল: একটি আইএমইআই নম্বর দিয়ে অসংখ্য ফোন তৈরি করা হচ্ছে, যা সাইবার অপরাধ, চুরি ও অন্যান্য অবৈধ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এনইআইআর সিস্টেমে প্রতিটি ফোনের আইএমইআই যাচাই হবে, ফলে ক্লোন ফোন চেনা সহজ হবে।
রাজস্ব সংকোচন রোধ: অবৈধ পথে আমদানিকৃত ফোনে সরকারের বিশাল অঙ্কের শুল্ক ও ভ্যাট হারাচ্ছে। নিবন্ধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই রাজস্ব আদায় নিশ্চিত হবে।
ভোক্তা অধিকার সুরক্ষা: ক্লোন বা রিফারবিশ (পুরোনো ফোন নতুনের মতো করে সাজিয়ে বিক্রি) ফোনে গুণগত মান ও নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকে। নিবন্ধিত ফোন কেনার মাধ্যমে ভোক্তারা নিশ্চিত হতে পারবেন।
চুরি/হারানো ফোন ট্র্যাকিং: নিবন্ধিত আইএমইআই নম্বরের সাহায্যে চুরি যাওয়া বা হারানো ফোন ট্র্যাক করা এবং নেটওয়ার্ক থেকে ব্লক করা সম্ভব হবে।
আপনার ফোনটি অবৈধ নাকি ক্লোন? ৩০ সেকেন্ডে নিজেই যাচাই করুন
বিটিআরসি খুব সহজ তিনটি ধাপে ফোন যাচাইয়ের পদ্ধতি দিয়েছে। আপনার ফোনের ডায়ালার থেকে এই কাজটি করুন:
ধাপ ১: *#06# ডায়াল করুন। ১৫ ডিজিটের আইএমইআই (IMEI) নম্বরটি নোট করে নিন। (দ্বৈত সিমের ফোনে দুটি আইএমইআই থাকতে পারে)।
ধাপ ২: *১৬১৬১# ডায়াল করুন। একটি অটোমেটিক বার্তা আসবে।
ধাপ ৩: সেখানে আপনার ফোনের ১৫ ডিজিটের আইএমইআই নম্বরটি লিখে সেন্ড করুন। কিছুক্ষণের মধ্যে ফিরতি এসএমএস-এ আপনার ফোনের অবস্থা (Valid, Invalid বা Clone) জানানো হবে।
অনলাইনে যাচাই: সরাসরি বিটিআরসির এনইআইআর ওয়েবসাইট neir.btrc.gov.bd-এ গিয়ে ‘Verify IMEI’ অপশনে ক্লিক করে আইএমইআই নম্বর লিখলেও একই তথ্য পাবেন।
১৬ ডিসেম্বরের পর কী হবে? বিস্তারিত নিবন্ধন প্রক্রিয়া
শুরুর তারিখ: ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বিজয় দিবস)।
কার জন্য: দেশে থাকা সকল অবৈধ, অনিবন্ধিত, ক্লোন করা বা বিদেশ থেকে ব্যক্তিগতভাবে আনা মোবাইল ফোন।
বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আমিনুল হক জানিয়েছেন, বর্তমানে ব্যবসায়ীদের কাছের অনিবন্ধিত ফোন যাচাই করা হবে। ক্লোন ও রিফারবিশ ফোন বাদে বাকিগুলোকে নির্দিষ্ট রাজস্ব (শুল্ক/ট্যাক্স) পরিশোধের মাধ্যমে বৈধ করে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।
বিদেশ থেকে আনা ফোনের নিবন্ধন নিয়ম (Special Registration)
বিদেশ থেকে ব্যক্তিগতভাবে আনা ফোন বা উপহার পাওয়া ফোনের জন্যও রয়েছে আলাদা নিয়ম:
প্রাথমিক সুযোগ: ফোনটি দেশে আনার পর প্রাথমিকভাবে ৩০ দিন নেটওয়ার্কে সচল থাকবে।
অনলাইন নিবন্ধন: এই ৩০ দিনের মধ্যে অবশ্যই neir.btrc.gov.bd পোর্টালে গিয়ে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট খুলে নিবন্ধন করতে হবে।
কী লাগবে?
ফোনের আইএমইআই নম্বর।
পাসপোর্টের সংশ্লিষ্ট ভিসা/ইমিগ্রেশন স্ট্যাম্পের কপি।
ফোন ক্রয়ের রসিদ (ইনভয়েস)।
প্রক্রিয়া: ‘Special Registration’ সেকশনে গিয়ে তথ্য ও কাগজপত্র আপলোড করে সাবমিট করুন। ফোন বৈধ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হবে। অবৈধ বা সন্দেহজনক হলে, নেটওয়ার্ক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে এসএমএস দেওয়া হবে।
ব্যাগেজ রুলস স্মরণ: একজন যাত্রী শুল্কমুক্ত হিসেবে সর্বোচ্চ দুটি ফোন (একটি নতুন ও একটি পুরোনো/ব্যবহৃত) আনতে পারবেন।
ফোন বিক্রি বা হস্তান্তর করতেই ডি-রেজিস্ট্রেশন জরুরি
১৬ ডিসেম্বরের পর থেকে নিবন্ধন শুধু একবার নিলেই চলবে না। আপনার নিবন্ধিত ফোনটি যদি বিক্রি, দান বা হস্তান্তর করতে চান, তবে অবশ্যই আগে ‘ডি-রেজিস্ট্রেশন’ করতে হবে। না হলে, ফোনটি আপনার নামেই নিবন্ধিত থাকবে এবং নতুন মালিক কোনো সমস্যায় পড়লে বা ফোনটি দিয়ে কোনো অপরাধ করলে আইনি জটিলতা আপনার উপরই পড়তে পারে।
ডি-রেজিস্ট্রেশন করার তিনটি উপায়:
সিটিজেন পোর্টাল: neir.btrc.gov.bd
মোবাইল অ্যাপ: বিটিআরসি প্রকাশিত অফিসিয়াল অ্যাপ।
ইউএসএসডি কোড:
*১৬১৬১#ডায়াল করে মেনু ফলো করুন।
সতর্কতা: ডি-রেজিস্ট্রেশন করার সময় গ্রাহকের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর ব্যবহার করতে হবে এবং সেই ফোনে নিবন্ধিত সিম কার্ডটি ফোনে থাকতে হবে।
নিবন্ধন না করলে কী শাস্তি?
বিটিআরসির স্পষ্ট নির্দেশনা হলো – নির্ধারিত সময়ের মধ্যে (১৬ ডিসেম্বরের পর ঘোষিত গ্রেস পিরিয়ডে) ফোন নিবন্ধন না করলে, সংশ্লিষ্ট মোবাইল ডিভাইসটি ধাপে ধাপে নেটওয়ার্ক সার্ভিস থেকে সম্পূর্ণরূপে ব্লক হয়ে যাবে। অর্থাৎ:
কল করা বা গ্রহণ করা বন্ধ।
ইন্টারনেট ডাটা ও এসএমএস পরিষেবা বন্ধ।
ফোনটি একটি সাধারণ অফলাইন ডিভাইসে পরিণত হবে।
বিজয় দিবসে ডিজিটাল নিরাপত্তার নতুন অঙ্গীকার
১৬ ডিসেম্বর শুধু আমাদের মহান বিজয়ের স্মারক নয়, এবার হয়ে উঠছে ডিজিটাল জগতে অবৈধতা ও অনিয়মের বিরুদ্ধে একটি নতুন অঙ্গীকারের দিন। এনইআইআর সিস্টেমের সফল বাস্তবায়ন দেশের টেলিকম খাতকে আরও স্বচ্ছ, নিরাপদ ও সংগঠিত করবে। তাই সময় থাকতে আপনার ও প্রিয়জনের ফোনের অবস্থা যাচাই করুন, প্রয়োজনীয় নিবন্ধন সেরে নিন এবং একটি নিরাপদ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে অংশীদার হন।
ফোকাস কীওয়ার্ড: এনইআইআর সিস্টেম, অবৈধ মোবাইল ফোন নিবন্ধন, ক্লোন ফোন চেক, বিটিআরসি ফোন নিবন্ধন, আইএমইআই যাচাই, ১৬ ডিসেম্বর এনইআইআর, ফোন বৈধতা যাচাই, ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টারট্যাগস: এনইআইআর, NEIR, বিটিআরসি, BTRC, আইএমইআই নিবন্ধন, IMEI registration, ক্লোন ফোন, অবৈধ মোবাইল ফোন, ফোন যাচাই, *16161#, neir.btrc.gov.bd, মোবাইল নিবন্ধন বাংলাদেশ, ১৬ ডিসেম্বর, সাইবার নিরাপত্তা, ডিজিটাল বাংলাদেশ, ফোন ডি-রেজিস্ট্রেশন
